মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে

মূল্যস্ফীতির হিসাব করা হয় চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার মূল্য ধরে। ৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতির মানে হলো, গত বছর অক্টোবর মাসে যে পণ্য ও সেবা কিনতে ১০০ টাকা ব্যয় হয়েছে, গত মাসে সেটি কিনতে বাড়তি লেগেছে ৯ টাকা। গত আগস্টে দেশে মূল্যস্ফীতি ১১ বছর ৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে (৯ দশমিক ৫২ শতাংশ)।

দেশে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। তবে তা তেমন কোনো স্বস্তির খবর নয়। কারণ, কমার হার সামান্য এবং মূল্যস্ফীতি এখনো ৯ শতাংশের কাছাকাছি।

 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তৈরি করা মূল্যস্ফীতির হিসাব গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। হিসাব বলছে, গত অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশে। এর আগের দুই মাসে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি ছিল।

অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্তকে বেশি চাপে ফেলেছে। কারণ, মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার কম। মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে, সেটি মানুষকে তেমন কোনো স্বস্তি দেবে না।

বিবিএসের কর্মকর্তারা জানান, অক্টোবর মাসে চালের দাম কমেনি, আবার বৃদ্ধিও পায়নি। মোটা চালের দাম এখনো প্রতি কেজি ৫০ টাকার ওপরে। তবে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে। চাল-তেলের মূল্যবৃদ্ধি না পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কম হয়েছে। ওদিকে গত অক্টোবরে মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে ছিল চিনি। ৮৫ টাকার চিনি কেজিতে ১১০ থেকে ১২০ টাকা হয়েছে।

পোশাক, পরিবহন খরচ, বই-খাতাসহ বিভিন্ন পণ্যের দামের পরিস্থিতি প্রকাশকারী খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে অক্টোবর মাসে। হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশে। আগের মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। অন্যদিকে গত অক্টোবরে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে সাড়ে ৮ শতাংশ হয়েছে। আগের মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ০৮ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতির তথ্যের পাশাপাশি প্রতি মাসে জাতীয় মজুরি বৃদ্ধির হারের তথ্যও প্রকাশ করা হয়। মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার কম হলে প্রকৃত আয় কমে যায়। বিবিএসের হিসাবে, গত অক্টোবর মাসে জাতীয় মজুরি বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ।

একজন শ্রমিক ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে ১০০ টাকা মজুরি পেলে, এ বছর অক্টোবর মাসে তা বেড়ে হয়েছে ১০৬ টাকা ৯১ পয়সা। কিন্তু একই সময়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। অর্থাৎ যে হারে মজুরি বাড়ছে, এর চেয়ে বেশি হারে মূল্যস্ফীতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। বিগত কয়েক মাস ধরে মূল্যস্ফীতির হার মজুরি বৃদ্ধির হারের চেয়ে অনেক বেশি।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমায় স্বস্তির সুযোগ নেই। অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি এখনো অনেক বেশি। এটি গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্তের কাছে জীবিকার সংকট। কারণ, মূল্যস্ফীতির চেয়ে তাদের মজুরি বৃদ্ধির হার কম। তিনি আরও বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গরিব মানুষকে সঞ্চয় ভাঙতে হচ্ছে বা জমি বিক্রি করতে হচ্ছে কিংবা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। এটির কোনোটিই সুখকর কিছু নয়।