ডলারের দাম নিয়ে চলছে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা

ডলারের দাম নিয়ে চলছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। গত এপ্রিল থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক এ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে। তারপরও ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে পরে সেই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় ব্যাংকগুলোর হাতে।

ব্যাংকগুলোর নির্বাহীদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ডলারের দাম তাদেরই নির্ধারণ করে দিতে হবে, বাজারের ওপর ছাড়া যাবে না। এর পর থেকে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদার নেতারা মিলে প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে ডলারে দাম নির্ধারণ করছেন। এর মাঝেই একাধিক দফায় ডলারের দাম পরিবর্তনও করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে না প্রবাসী আয়, বরং কমছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের দাম নিয়ে বারবার সিদ্ধান্ত বদলের কারণেই প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এদিকে ব্যাংকগুলোও এখন ভুগছে তীব্র ডলার-সংকটে। ডলার-সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক আমদানি দায় পরিশোধ পিছিয়ে দিচ্ছে। নতুন করে ঋণপত্র খোলাও কমিয়ে দিয়েছে। ডলারের দাম নির্ধারণের সঙ্গে যুক্ত একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। ডলারের দাম এভাবে ধরে রাখা ঠিক হচ্ছে না। প্রবাসী আয় সব হুন্ডিতে চলে যাচ্ছে। সামনে আরও খারাপ সময় দেখতে পাচ্ছি। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এগিয়ে না এলে বিদেশি ব্যাংকের কাছে আমাদের ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে পড়বে।’
ডলার-সংকটের মধ্যে গত অক্টোবরে আরও কমেছে প্রবাসী আয়। অক্টোবরে প্রবাসীরা ১৫২ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন। এ আয় গত আট মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
মালয়েশিয়া ও ইতালির এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশ দুটির মুদ্রার মান প্রতিনিয়ত কমছে। মালয়েশিয়ায় ১৯ নভেম্বর নির্বাচন। এরপর মুদ্রার মান স্থির হতে পারে। আবার জিনিসপত্রের দামও বেড়ে গেছে। ফলে দেশটি থেকে বড় অঙ্কের আয় কেউ পাঠাচ্ছে না। আর যা পাঠাচ্ছে, মুদ্রার দরপতনে ডলারও কম মিলছে। আবার হুন্ডিতে বেশি দাম দেওয়ায় অনেক আয় সেদিকে চলে যাচ্ছে। একই অবস্থা যুক্তরাজ্যের মুদ্রার ক্ষেত্রেও।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় বৈধপথে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গত জুলাইয়ে আসে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও আগস্টে ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়। তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে এসে প্রবাসী আয় কমে যায়। সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। আর গত মাসে এসেছে ১৫২ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। মূলত প্রবাসী আয়ে সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরই আয় কমে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আয় কমে গেছে।