দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.৩৩%

গতকাল মঙ্গলবার ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেক–পরবর্তী সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ফেব্রুয়ারিতে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চে তা বেড়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়েছে।

অর্থাৎ একজন ভোক্তা গত বছরের মার্চে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেত, এ বছরের মার্চে একই পণ্য কিনতে তাঁর খরচ হয়েছে ১০৯ টাকা ৩৩ পয়সা। চলতি বছরের শুরু থেকে পণ্যের দাম বাড়তির দিকে। জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৫৭ ভাগ।

 

Mzamin

 

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাকজাতীয় পণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে বাড়িভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন ও শিক্ষা উপকরণের দাম। এর প্রভাব পড়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে।

পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, খাদ্য খাতে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ, গত মাসে যা ছিল ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ।

পূর্ব আশঙ্কা অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি বেড়েছে বলে জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী এম আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, আগেই বলেছিলাম মূল্যস্ফীতি বাড়বে। সেই ধারাবাহিকতায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়েছে। তবে আল্লাহ বাঁচিয়েছে ১০ শতাংশ হয়নি।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি তেলের দামের ফলে আবারো মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। কারণ সৌদি আরব ও রাশিয়া তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

অর্থ বিভাগের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস ও তেলের মূল্য যে হারে বেড়েছে, তার পুরোটা ভোক্তাদের উপর চাপিয়ে দিলে চলতি জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়াবে ৯.৪ শতাংশে। আর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও তেলের দাম না বাড়ালে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়াবে ৬.৭ শতাংশে।

তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত জুনেই অর্থ বিভাগের প্রাক্কলনের তুলনায় মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৭.৫৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পণ্যমূল্যের ব্যাপক স্ফীতিসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতির ভিত্তিতে এসব প্রক্ষেপণগুলি অনুমান করছে যে, এতে করে স্থানীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নিজস্ব মডেল এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার নির্ধারণ প্রভাবিত হবে।

চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ভর্তুকির চাপের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের মতামতও নিয়েছে অর্থ বিভাগ।

অর্থ বিভাগকে জ্বালানির দাম না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মহীউদ্দীন আলমগীর বলেন, ‘জ্বালানির দাম ২০ শতাংশের মতো বাড়লে ধানের উৎপাদন খরচ বাড়বেই। কিন্তু সেগুলো ন্যায্যমূল্যে বিক্রি হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। এটাই নতুন ভারসাম্য।’

মূল্যের উপর আর কোনো প্রভাব না ফেলে সামগ্রিক চাহিদা এবং নতুন সামগ্রিক সরবরাহ ধরে রাখার সুপারিশও করেন তিনি।

সরকার হয়তো সাধারণভাবে মূল্য কমাতে চাইবে বলে মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।

তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং বেসরকারি খাতে প্রয়োজনীয় ঋণ প্রবাহ অব্যাহত রাখতে মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি মুদ্রাবাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে বলে উঠে এসেছে এ প্রতিবেদনে।